Bangladesh

নিউজঃরাজাকারসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাখার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ডিআরইউ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর এ দাবি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকায় অজ্ঞতাবশত কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীনতাবিরোধীর নাম বাদ পড়তে পারে, কিন্তু রাজাকারের তালিকায় কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ পরিবারের কারো নাম যুক্ত হওয়া শুধু ভুল নয় গুরুতর অপরাধ বলে আমরা মনে করি।
“এ ধরনের অপরাধের জন্য কারা দায়ী তা তদন্ত করার জন্য বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি।”
রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় যে প্রক্রিয়ায় এ তালিকা করেছে তা ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, ১৯৮৫ সালে ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও গণহত্যাকারী ব্যক্তি ও সংগঠনসমূহের তালিকা প্রকাশ করেছিলাম ‘একাত্তরের ঘাতক দালালরা কে কোথায়’ নামক গ্রন্থে, যার ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে গঠিত হয়েছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
“আলোড়ন সৃষ্টিকারী বইটির ভূমিকায় আমরা বলেছিলাম, ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র’ অসম্পূর্ণ; গণহত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের তালিকা প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম।”
পরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষক সংগঠন ও ব্যক্তির উদ্যোগে আরও কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের নয় নম্বর সেক্টরের সাব কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর শামসুল আরেফিনের তিন খণ্ডে প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা, যা ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরোত্তর বাংলাদেশে অধিকাংশ সময় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষমতায় ছিল স্বাধীনতাবিরোধী, গণহত্যাকারী এবং তাদের দোসররা। ক্ষমতায় থাকার সুবাদে মুক্তিযুদ্ধের বহু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তারা নষ্ট অথবা বিকৃত করেছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে এখনও তাদের অনুসারীদের হটানো যায়নি।
একারণে বধ্যভূমি শনাক্তকরণ, রাজাকার ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকর্মের দায়িত্ব শুধু আমলাদের না দিয়ে তার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা সংশ্লিষ্টদের যুক্ত করার পক্ষে তিনি মত দিয়েছিলেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল এসময় সেখানে ছিলেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধীর’ যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকের নাম রয়েছে।
বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী তপন কুমার চক্রবর্তী ও রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফও রাজাকারের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন।
এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তালিকা তৈরি পেছনে কাদের হাত রয়েছে তার খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন।
গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের রাজাকারের তালিকায় নাম আসায় ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে প্রকাশের তিন দিনের মাথায় বুধবার ওই তালিকা স্থগিত করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এর কয়েক ঘণ্টা পরে গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে ওই তালিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।