Miscellineous

বাংলা ভাষা ও তরুণ সমাজ
ভাষা একটি জাতি বা সম্প্রদায়ের পরিচয় বহন করে। পৃথিবীতে প্রায় প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ভাষা বা বর্ণ রয়েছে। যার দ্বারা প্রত্যেক জাতি নিজেদের কথা বলার অধিকার ও নিজস্ব সাহিত্য সংস্কৃতির আত্মপ্রকাশ করতে পারে। তবে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে ভাষার বিকৃতি সর্বত্র দেখা যাচ্ছে।
বর্তমানে তরুণ সমাজ ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ভুক্তি ক্রমান্বয় হ্রসের ফলে বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক কমছে। তরুণদের মধ্যে বই পড়া কবিতা প্রবন্ধ পাঠের প্রতিযোগিতা নেই বললেই চলে। তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় অনলাইন বিভিন্ন লোভনীয় গেমস আসক্ত হয়ে তরুণ সমাজ নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ভুক্তি ও শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেরেছে। যদিও ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে তরুণদের মধ্যে -অমর একুশে বই মেলার মাধ্যমে ভাষা প্রতী, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা বই পড়া প্রবন্ধ পাঠ ইত্যাদি তরুণ সমাজে উদ্বুদ্ধ হলেও তা দীর্ঘ সময় ব্যাপী স্থায়ী নয়। কেননা তরণদের মধ্যে প্রকৃত ভাষাপ্রেম জাগ্রত না হলে তা স্থায়ী হবে না। প্রকৃত ভাষার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সরকারি ভাবে অথবা বেসরকারী ভাবে কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে তরুণ সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে। কেননা তরুণ সমাজ আগামীদিনে ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতির পরিচয় বহন করবে।
ভারতবর্ষে বহু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী বা জাতি বসবাস করলেও প্রত্যেক জাতি তাদের নিজ নিজ ভাষার প্রতি ভুক্তি রয়েছে। প্রায় দুইশত বর্ষ ব্রিটিশ অপশাসন ও কুশাসনের মধ্যদিয়ে ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের পরিপেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে ভারত গঠিত হলেও শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশ (পূর্ব বাংলা) পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। এছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন আদর্শগত কোন যোগসূত্র ছিলনা বললেই চলে। শুধুমাত্র ভাষার কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এছাড়া পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী খুব ভালো করে জানতো যে, একটি দেশ বা জাতিকে দাসত্বে রুপান্তিত করতে হলে প্রথমে তার ভাষা বা সংস্কৃতি বিনষ্ট করতে হবে । তাই পাকিস্তান জন্মের পরে তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল ইসলামাবাদ। তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রনায়ক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, Urdu and Urdu shall be the state language of Pakistan. কিন্তু এই দেশের ছাত্র সমাজ কবি সাহিত্যিক no no, it can't be আওয়াজ তুলে তার ধৃষ্টতাপূর্ণ ঘোষণর বলিষ্ঠ প্রতিবাদ জানায়। কেননা বাংলা এইদেশের মানুষে হ্নদয়ের অন্তস্থলের ভাষা, যে ভাষায় প্রকৃতি তার নিজস্ব রূপ ফিয়ে পাই। আর উর্দু একটি ভিন্নদেশী ভাষা যেটি জোর করে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী চাপিয়ে দিয়েছিল।
শুধু ভাষার বৈষম্য নয় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যর স্বীকার হতে থাকে এই দেশের মানুষ। তৎকালীন সময়ে সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠন 'তমুদ্দন মজলিস' গঠনের মধ্যদিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালাতে থাকে এই দেশের ভাষা সৈনিকগণ। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই স্লোগানে মুখরিত হতে থাকে ঢাকার রাজপথ। কিন্তু তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে ২১ই ফেব্রুয়ারিতে উত্তাল জনতার মিছিলে পলিশের গুলিতে শহীদ হন, সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত আরো নাম না জানা অনেক ভাষাশহীদ। শেষপর্যন্ত রক্তের বিনিময়ে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা প্রতিষ্ঠা করেছে এই দেশের তরুণ সমাজ যা পৃথিবীতে আমরাই প্রথম দেশ যে নিজের ভাষা প্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবন দিয়েছে। তাই বাংলা ভাষার প্রতি ভুক্তি ও শ্রদ্ধা তরুণ সমাজে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি বেসরকারী, স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় তথা সর্বত্র জায়গায় বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে তবেই বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে। তাই আমাদের প্রত্যাশা বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার দেশের সবর্ত্র জায়গায় ছড়িয়ে যাগ।
কলাম লেখক, মো বিপ্লব আলী
ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়