Politics

বর্তমানে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ।
২০২৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছাড়িয়ে পৃথিবীর শীর্ষ অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হবে বেইজিং । চীনা অর্থনীতি ও প্রযুক্তি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাতে আগামী বিশ্ব চীনের প্রভাব বলায়ে অন্তভুর্ক্ত হতে পারে রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ধারণা । বেইজিং বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সুখ্যাতি অর্জন করলেও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিহিংসার স্বীকার হচ্ছে উইঘুর মুসলমান। জিনজিয়াং প্রদেশে চীনা উইঘুর মুসলমানদের বসবাস। প্রদেশটির আয়তন ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটার যা চীনের অন্যতম সর্ববৃহৎ একটি অঞ্চল যা বাংলাদেশের আয়তনের বারগুন বড়ো । জিনজিয়াং প্রদেশটির মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ, উইঘুর ছাড়াও চীনা হান জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। এর মধ্যে মুসলিম প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ যা অঞ্চলটিতে ৬৮ শতাংশ মুসলিম। এছাড়া চীনা মুসলমানদের হুই বলা হয়। জিনজিয়াং প্রদেশটিতে উইঘুরদের বর্ণমালা আরবি ছাড়াও চীনা ম্যান্ডারিন ভাষা প্রচলিত রয়েছে। জিনজিয়াং প্রদেশটির রাজধানী উরুমচি এবং বৃহত্তম শহর কাশগড়। এখানে বিপুল পরিমান খনিজ ও তেলসম্পদ রয়েছে। আঞ্চলিক গুরুত্ব ও ভূরাজনৈতিক কৌশলগত কারণ ছাড়াও ভারত পাকিস্তান আফগানিস্তান কাজাখিস্তান মঙ্গোলিয়া রাশিয়া ইত্যাদি দেশের সঙ্গে জিনজিয়াং অঞ্চলের সীমান্ত রয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক একটি কমিটি ২০১৮ সালে অগস্ট মাসে জানতে পারে যে চীন সরকার উঘুরদের স্বায়ত্ত শাসিত এলাকাকে মূলত একটি বন্দি শিবিরে পরিণত করেছে। সেখানে দশ লখোর মতো মানুষ বন্দি করে রাখা হয়েছে। তবে চীন প্রথমে অস্বীকার করলে পরবর্তী তা স্বীকার করে বলে, যে ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উইঘুরদের হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছে বেইজিং। সম্প্রীত মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর প্যন্টাগানের এশিয়া বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা রান্ডার স্কিবার বলেছেন, "কসন্সেস্ট্রশন ক্যাম্পে অটোক রাখা চীনা উইঘুর মুসলমানের সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি হবে"। যেখানে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে উইঘুর সম্প্রদায় যাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক ও বিশেষ করে ধর্মীয় স্বাধীনতায় অাঘাত করা হচ্ছে। ধর্মীয় উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা চালিয়ে উইঘুরদের বন্দি শিবিরে আটক করে রেখেছে। ফ্রিডম ওয়াচের মতে, "চীন হচ্ছে পৃথিবী অন্যতম প্রধান ধর্মীয় নিপীড়ক দেশ। যেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকায় এসব নিপীড়ন গোঙানির শব্দ বিশ্ববাসী খুব একটা জানতে পারেনা"। ফিলিস্তিন সিরিয়া ইয়েমেন আফগানিস্তান ভারত ও রাখাইনে নিপীড়িত নির্যাতিত মুসলিমদের আর্তনাদ বিশ্ববাসীদের হৃদয় মর্মাহত করেছে। কিন্তু উইঘুরদের আর্তনাদ হয়ত বিশ্ববাসীর হ্নদয় স্পর্শ করতে পারেনি। কেননা চীন কমিউনিস্ট শাসিত রাষ্ট্র হওয়ায় বাক স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমে কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করা হয়েছে।
পরাধীনতার শিকল একটি জাতিকে কতটা নিপীড়ন করে যে জাতি পরাধীন শুধু সে জাতি জানে। উইঘুরা পূর্ব তুর্কিস্তান নামে একটি সময় স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল। ১৮৮৪ সালে মাঞ্চু বা কিং রাজা কাশগড় কেন্দ্রিক পূর্ব তুর্কিস্থান স্বাধীন রাষ্ট্রটিকে দখল করে। তখন থেকে পরাধীনাতার চাদার উইঘুরদের ওপর পড়ে। ১৯১১ সালে মাঞ্চু শাসন পতন হলে। পূর্ব তুর্কিস্তানে প্রত্যেক চীনা শাসন চালু করা হয়। কিন্তু স্বাধীনচেতা বীর উইঘুরা এই বিদেশী শাসনের কাছে মাথানোয়ায় নি, চালিয়ে যেতে থাকে স্বাধীনতার সংগ্রাম। অত:পর ১৯৩৩ এবং ১৯৪৪ সালে তুর্কিস্থান ইসলামি পার্টি নেতৃত্ব তিয়েশান পর্বতমালার ওপরে ঘুরজা এবং এর আশেপাশে বিপ্লবের মাধ্যমে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীন পর্ব তুর্কিস্থান। কিন্তু বিংশশতাব্দী প্রথম দিকে বিশ্বব্যাপী যখন কার্ল মাক্সের সমাজতন্ত্র জয়কার তখন মাওসেতুং এর নেতৃত্ব ১৯৪৯ সালে চীনে সাম্যবাদ তথা কমিউনিস্ট প্রতিষ্ঠা হলে পূর্ব তুর্কিস্তান চীনের দখল চলে যায়। সেখানে কমিউনিস্ট প্রশাসন পূর্ব তুর্কিস্তানকে জিনজিয়াং স্বায়ত্তশাসন প্রদেশের অর্ন্তভুক্ত করে এবং প্রদেশটির গর্ভনাল মনোনীত হয়েছিল সাইফুউদ্দীন আজিজ। পরবর্তী চীন ধর্মীয় স্বাধীনতা রুদ্ধ করে কমিউনিস্ট মতাদর্শ উইঘুরদের ওপর চাপিয়ে দেয়। মিয়ানমার যেভাবে সন্ত্রাস দমনের নামে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলেদিয়েছে তেমনি চীন ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ প্রোপাগান্ডা চালিয়ে উঘুরদের হয়ত পাশের দেশে ঠেলেদিতে পারে। তাই উইঘুরদের পাশে বিশ্ব মানবপ্রেমিদের এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীতে শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে আর যেন মানুষকে নির্যাতিত অত্যাচারীত ও বাস্তচ্যুত না হতে হয়। যেখানে থাকবে মানবপ্রেম ও মানবতার জয়ধ্বনি এমন একটা পৃথিবী আমাদের গড়ে তুলতে হবে। যাতে আগামী প্রজন্ম একটি বাসযোগ্য ও বৈষম্যহীন পৃথিবী পাই।
কলাম লেখক, মো বিপ্লব আলী
ইতিহাস বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়